গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে চরমোনাইর পীরের দল

রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছুই নেই। নেই স্থায়ী শত্রু বা বন্ধু। গেল দুই সপ্তাহ ধরে রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত নাম চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিএনপির দীর্ঘ দিনের মিত্র হলো জামায়াত। ৫ আগস্টের পর তাদের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত দুই দলই এখন বিপরীতমুখী অবস্থানে। বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের মাঠে ভালো অবস্থান আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর।
বিগত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখার ভোট ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে ভোটের হিসেবে দলটির অবস্থান ছিলো দ্বিতীয় বা তৃতীয়। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও দলটি কখনো সংসদে তাদের প্রতিনিধি পাঠাতে পারেনি। দলটি ক্ষমতার চেয়ে নীতি আদর্শকে বেশি গুরুত্ব দেয়। সেই কারণে আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাদেরকে লোভনীয় অফার দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। দলটি সেই লোভনীয় অফার প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের আদর্শিক দৃঢ়তার যে অবস্থান তা ধরে রাখে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দলটির যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কয়েকদিন আগে সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হান্নান ৫ আগস্ট ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিমের নেতৃত্বে কারফিউ ভেঙেছে বলে স্বীকার করেছে। এটা সত্য যে, জুলাই বিপ্লবে রাজনৈতিক দল হিসেবে দলীয় ব্যানারে তারাই রাজপথে ছিলো। হাসিনা পালিয়ে যাবার পর থেকে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম,

ভিপি নুরের গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, ববি হাজ্জাজের এনডিএমের সাথে সংলাপ করেছে। এরই মধ্যে গেল ২১ জানুয়ারি বরিশালে চরমোনাইর পীরের বাড়িতে যান জামায়াত আমির। এতে দুই দলের আমিরের বক্তব্য ছিলো একই রকম। আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে একটি মাত্র বাক্স দেবার কথা দু’জনই বলেছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইর পীর মুফতি রেজাউল করিমের সাথে দলটির কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৭ জানুয়ারি দুপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন দুই দলের নেতারা।

জামায়াতের আমির ও বিএনপির মহাসচিব চরমোনাইর পীরের সাথে সাক্ষাতের পর রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছে। জনমনে জল্পনা কল্পনা বাড়ছে। কোন দিকে যাচ্ছে জোট মহাজোটে না থাকা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ? বিএনপির সাথে আদর্শিক বিরোধ আর জামায়াতের সাথে ইসলামী আন্দোলনের রয়েছে আকিদাগত বিরোধ। সব মিলিয়ে বুঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে? দলটির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আঁতাতের গুজব থাকলেও বাস্তবে তার কোনো ভিত্তি নেই। তবে এটা সত্য যে, আওয়ামী লীগের আমলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় তারা কম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত দুই দলই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে পাশে পেতে চায়। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাইছে, তাদের আদর্শের সাথে মেলে এমন ইসলামী দলগুলোর সাথে জোট করতে। এদিকে জামায়াত যদি তাদের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর আপত্তিকর বিষয় থেকে সরে আসে তবে চরমোনাইর পীরের সাথে জামায়াতের ঐক্য হতে পারে। তবে জামায়াতের সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঐক্য হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এটা স্বীকার করতেই হবে, আগামীর রাজনীতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ট্রামকার্ড হিসেবে কাজ করবে। বিএনপি ও জামায়াত দুই দলের কাছে ব্যাপক গুরুত্ব পাবে দলটি। সেই সাথে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

লেখক: সাংবাদিক ও সমাজকর্মী।